দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে ভুগছেন (১০ বছরের বেশি), রক্তের গ্লুকোজ যাঁদের প্রায়ই অনিয়ন্ত্রিত থাকে, এর সঙ্গে যাঁরা উচ্চ রক্তচাপেও ভুগছেন, রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে, রক্তশূন্যতা আছে, ধূমপায়ী কিংবা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে চোখের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিসের জন্য চোখে যে সমস্যাগুলো হয়, এর মধ্যে অন্যতম ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।

মানুষের চোখের ভেতরের আলোকসংবেদী অংশ, যেখানে বস্তুর প্রতিবিম্ব তৈরি হয়, তা-ই রেটিনা। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি রোগে চোখের এ রেটিনার রক্তনালিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে রক্তনালি থেকে পানি, চর্বি ও রক্ত রেটিনার বিভিন্ন স্তরে জমা হতে থাকে। সময়মতো চিকিৎসা না করালে রেটিনাতে কিছু অপরিপক্ব রক্তনালি তৈরি হয়, যা থেকে চোখের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত রোগীরা প্রাথমিকভাবে কোনো সমস্যা বুঝতে পারেন না। কিন্তু ধীরে ধীরে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, চোখের সামনে কিছু ভাসা, চোখের প্রেশার বেড়ে যাওয়া কিংবা হঠাৎ এক চোখে কিংবা উভয় চোখে পুরোপুরি দৃষ্টিহীনতার সমস্যায় ভুগতে পারেন।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে রেটিনার যতটুকু ক্ষতি হয়ে যায়, সেটা অপরিবর্তনীয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ রোগ ধরা পড়তে বেশি দেরি হয়ে গেলে চিকিৎসা সত্ত্বেও দৃষ্টি ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তাই সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারানো প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। এ সমস্যা প্রতিকারে রোগীর নিজেকে এবং তাঁর পরিবারের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। রেটিনার অবস্থা সম্পর্কে চোখের চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি শুরু হয়ে গেলে প্রারম্ভিক অবস্থায় সতর্ক হতে হবে। রোগীর শর্করা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, কিডনির অবস্থা পর্যবেক্ষণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তের কোলেস্টেরল কমানো ছাড়া নিয়মিত রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া ফলোআপ অনুযায়ী তিন থেকে ছয় মাস অন্তর রোগীর চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসক রোগীর চোখের মণি বড় করার ওষুধ দিয়ে চোখের পিউপিল বা মণি বড় করে তার মধ্য দিয়ে রেটিনা পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে চোখের রেটিনার কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষাও করাতে পারেন, যেমন অপটিক্যাল কোহারেন্স টমোগ্রাফি বা ওসিটি, ফান্ডাস ফ্লুরোসেন্স এনজিওগ্রাফি বা এফএফএ ইত্যাদি।