রাজপথে পানি পথের যুদ্ধ!

বৃষ্টিতে ঢাকা ও সিটি শহর অলিতে-গলিতে, আনাচে-কানাচে থিই থিই করছে পানি। রাজ পথ–সেও ডুবেছে; রাজা নিখোঁজ! নগরপিতারা, ভ্রাতারা নগরপ্রসাদে বন্দি। সাঁতার কাটছে রিকশা, বাস; তাদের পেট মানুষ। আবার তাদের পেটে জায়গা না পাওয়ায় ভাগ্যবান, নিজের পরামর্শ সাঁতরাচ্ছেন; হাঁটু জল; কোমর জলে!…

বৃষ্টিতে ঢাকা ও সিটি শহর অলিতে-গলিতে, আনাচে-কানাচে থিই থিই করছে পানি। রাজ পথ–সেও ডুবেছে; রাজা নিখোঁজ! নগরপিতারা, ভ্রাতারা নগরপ্রসাদে বন্দি। সাঁতার কাটছে রিকশা, বাস; তাদের পেট মানুষ। আবার তাদের পেটে জায়গা না পাওয়ায় ভাগ্যবান, নিজের পরামর্শ সাঁতরাচ্ছেন; হাঁটু জল; কোমর জলে! নগরপিতারা বছরের পর বছর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলেছেন। রাস্তাঘাট উন্নয়ন করেছেন। এখন তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে, উন্নয়নের জোয়ার পাওয়া যাচ্ছে।

সেই জোয়ারে সিটিতে কিছু রসিক লোক নৌকা তৈরি করেছেন! রাজপথে নৌকার পরিবেশের পরিবেশ! তাহলে নাব্যয়তার কি শর্ত নাব্যতা এলো। এই সুযোগে কিছু লোক বিনে পয়সায় নৌকা ভ্রমণ হল বটে। একেই বলে “রথ দেখাও হল, কলা বেচাও হল”। নাগরিক দুর্ভাগ্য; আপনি কেউ নৌকা করতে ভ্রমণ করেছেন বলে খবর পাওয়া।

ব্যক্তিগত অনেকের কিছু সাংবাদিককে দেখাতে কেউ হাঁটু পানি, কেউ বা কোমর পানিতে “লাইভ” নিউজ কাভার করছেন। আহা! প্রতি কী নিবেদিত শক্তি! সূত্র যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তালিকা তৈরি করছেন; যেমনটি দেখা যায় বিবিসি বা সিএন-এর সাংবাদিকদের। তবে আমাদের বন্ধু ভাইদের কাজকে কোন ছোট করা হবে না। এটিও একটি যুদ্ধক্ষেত্র। রাজপথে পানি পথের যুদ্ধ। অনেকগুলো মানুষের সেই যুদ্ধের কথা তুলে ধরেছেন, দেশবাসী বিশ্ববাসীর কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন: ঢাকা শহর হাওয়া বদল প্রয়োজন

প্রায় পাঁচ বছর আগে পানি পথের প্রথম যুদ্ধে মোগল সম্রাট জহির সংযোগ বাবরলির আফগান ব্লক ইব্রাহিম লোদীকে পরাস্ত করে ভারত মোগল সাম্রাজ্য নদীতে। অবসান ঘটান ভারতে লোদী বংশের শাসনকালের। দিনটি ছিল ১৫২৬ তারিখ ২১ এপ্রিল। ঐতিহাসিক পানি পথে যুদ্ধ হয়েছিল তিনবার। গত ১৭৬১ সালে। তারপর আর হয়নি। যুদ্ধে বিজয়ী পার্টি সুখে শান্তিতে কাতর যুদ্ধ যুগের পর যুগ। কিন্তু নগর নাগরিক হওয়া রাজপথে আমাদের পানি পথ যুদ্ধের শেষ নেই। প্রতি বছর আমরা যুদ্ধ করছি। সৌভাগ্য আমাদের। বিজয়ী আমরাই হবি। প্রতিবার জয়ের মালা আমরাই পরছি। জয়ের আনন্দে আমরা যুদ্ধ জয়ের কষ্ট। তাইতো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই।

এছাড়াও পড়ুন  একটি মসৃণ প্রচারাভিযান বিজেপিকে সহজেই চেভেল্লা আসনে জয়ী হতে সাহায্য করে

এই পানি পথের যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করার কৃতিত্ব কিন্তু কম নয়। কোনো সাংবাদিক খবর সংগ্রহের মাধ্যমে ঝলমল করা ছবি যোগাযোগ মাধ্যমে ধরেছেন। অনেক অনেক 'লাইক' নকশা, বাহাবা চিত্রন। ফেসবুকের বদৌলতে যোগদান মিলছে! যাঁরা পানি পানের যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করে লাইক আর বাহা পাননি, সেখানে হবে না। সামনের জন্য প্রস্তুত!

নগরপিতাদের জন্য রয়েছে সুখবর। কত জঞ্জাল, কত আবর্জনা ভেসে গেছে জোয়ারের টানে। একেই বলে বৃষ্টিবন্ধু! পরিচ্ছন্ন সীমান্ত এলো! নগর পেটরা শান্তিতে পরিষদ, বৃষ্টি ছন্দে ছন্দময় পাওনা।

শুধু নাগরিকরা ভেসে আর ভিজেছেন তা নয়। বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দে কত জনে আসতে আসতে শৈশবে ফিরে! আহা! কতদিন পর এমন একটা দিন!

অনেক দিন আগে খবরের সংবাদে পড়লে, কোন একটা শহর ভাগা পূর্ণিমার রাত নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে, শহরবাসী জ্যোৎস্না রাস্তা। আমাদের নগরপিতা ভাবতে পারে, এমন বর্ষা মুখর দিনকে শব্দকে রাখতে কী করা যায়! সাধারণ ছুটির জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিতে পারেন; পানিতে যেতে রাজপথে নৌকা নামতে পারেন; নৌকা বাইচের অনুশীলন করতে পারেন। আরও কী কী করা যায় তা উদ্ভাবন করতে একটি জোট গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে সদস্যরা-চারটি দেশ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে পারেন। যুগে যুগে আমরা জলপথের যুদ্ধকে বৈষম্য রাখে।

(গত ১২ জুন এই উদ্ভাবনটি পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে)

উৎস লিঙ্ক