ল্যানসেটের সূচনা সংখ্যার মুখবন্ধে বলা হয়েছিল, এ সাময়িকী শুধু চিকিৎসাশাস্ত্রের বুদ্ধিবৃত্তিক কলাম প্রকাশ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং ক্লান্তিহীন প্রয়াস থাকবে চলমান বিষয়ের কালানুক্রমিক ঘটনাপঞ্জির পরিপূর্ণ আধার হিসেবে ল্যানসেটকে উপস্থাপন করার। সূচনালগ্নের সেই প্রত্যয় ২০০ বছরেও অম্লান।
ল্যানসেট বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর অবস্থান দৃঢ়। নীতিনির্ধারণী মহলে এর রয়েছে শক্তিশালী প্রভাব। ল্যানসেট–এ প্রবন্ধ প্রকাশ করতে পারলে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেন। বৈশ্বিক বা নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলের বা কোনো দেশের অথবা নির্দিষ্ট কোনো জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সারা বছর গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে ল্যানসেট। চিকিৎসায় অগ্রগতি, নতুন কোনো টিকা বা ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কোনো আবিষ্কার নিয়ে নিয়মিতভাবে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ছাপা হয়।
বৈশ্বিক কোনো সমস্যার গভীর অনুসন্ধানে ল্যানসেট প্রসিদ্ধ বড় বড় গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নিয়ে কমিশন গঠন করে। এসব কমিশনের তথ্য যেমন মূল্যবান, তেমনি কমিশনের সুপারিশ বিশ্বকে নতুন পথ দেখায়।
থমাস ওয়াকলি ১৮২৩ সালের ৫ অক্টোবর লন্ডন থেকে স্বাধীন এই সাময়িকীর প্রথম সংখ্যা প্রকাশ করেছিলেন। থমাস ওয়াকলি ছিলেন একজন শল্যচিকিৎসক। ল্যানসেটের অর্থ ছোট হালকা ছুরি বা স্কালপেল, যা শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
২০০ বছরে এসে ল্যানসেট–এর এডিটর-ইন-চিফ রিচার্ড হর্টন বলছেন, ল্যানসেট–এর প্রতিষ্ঠা হয়েছে স্বাস্থ্যকে অগ্রসরমাণ করতে। এটি সমাজ পরিবর্তনে কাজ করে, এটি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার।
করোনা মহামারিকালে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক ভূমিকা পালন করেছে এই সাময়িকী। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে অপরিচিত ভাইরাসে আক্রান্ত হতে থাকে অনেকে। এ বিষয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতেই বিশ্বের বিজ্ঞানীদের সামনে একাধিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ হাজির করে ল্যানসেট। করোনা টিকার আবিষ্কারক বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল, টিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল সবার আগে ল্যানসেট–এ প্রকাশ করার। করোনার উদ্ভব, করোনা কীভাবে ছড়ায়, করোনা হলে কী হয়, মাস্কের ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি, করোনার সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব, করোনার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি, লকডাউনের প্রভাব, করোনাকালে মানসিক স্বাস্থ্য, অক্সিজেন বা ভেন্টিলেটরের ভূমিকা, জেনোম সিকোয়েন্স—এ রকম বহুবিধ বিষয় নিয়ে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অসংখ্য প্রবন্ধ ল্যানসেট–এ ছাপা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। করোনা বিষয়ে একটি অনলাইন ‘কোভিড-১৯ রিসোর্স সেন্টার’ তৈরি করে ল্যানসেট। ল্যানসেট–এর তথ্য শুধু বিজ্ঞানী, গবেষক ও চিকিৎসকেরা ব্যবহার করেননি, ব্যবহার করেছেন সারা বিশ্বের সাংবাদিকেরাও। ল্যানসেট–এর রিসোর্স সেন্টারের অনেক তথ্য প্রথম আলো তার পাঠকের জন্য প্রকাশ করেছে।
ল্যানসেট কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ২০০ বছরে চারটি কাজ তারা মনোযোগের সঙ্গে করে এসেছে। এগুলো হচ্ছে: সমাজের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ইস্যুকে সামনে আনা, নতুন বিতর্ক সামনে আনা বা বিতর্কের পরিসর তৈরি করা, বিজ্ঞানকে প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করা এবং বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখা। এসব ক্ষেত্রে তাদের অর্জন অনেক। ঐতিহ্য ও অর্জনকে সামনে রেখে ল্যানসেট দ্বিশতবার্ষিকী উদ্যাপন শুরু করেছে।
কত বড় প্রতিষ্ঠান
শুরুতে সাময়িকীটির নাম ছিল দ্য ল্যানসেট। মূল সাময়িকীটি এখনো একই নামে আছে। বছরে এর ৫১টি সংখ্যা ছাপা আকারে বের হয়। এর অনলাইন সংস্করণ আছে। এ ছাড়া আরও ২৩টি পৃথক বিষয়ে সাময়িকী আছে। এর মধ্যে আছে: শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য বিষয়ে দ্য ল্যানসেট চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ; ডায়াবেটিস নিয়ে দ্য লানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজি; স্বাস্থ্য তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে দ্য ল্যানসেট ডিজিটাল হেলথ; যকৃৎ, পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় বিষয়ে দ্য ল্যানসেট গ্যাসট্রোএনটারোলজি অ্যান্ড হেপাটোলজি; বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ; রক্তরোগ বিষয়ে দ্য ল্যানসেট হেমাটোলজি; প্রবীণ নাগরিকদের স্বাস্থ্য বিষয়ে দ্য ল্যানসেট হেলদি লংজিভিটি; এইচআইভি/এইডস নিয়ে দ্য ল্যানসেট এইচআইভি; সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে দ্য ল্যানসেট ইনফেকসাস ডিজিজ; অণুজীব বিষয়ে দ্য ল্যানসেট মাইক্রোব; স্নায়ুতন্ত্র বিষয়ে দ্য ল্যানসেট নিউরোলজি; ক্যানসার বিষয়ে দ্য ল্যানসেট অনকোলজি; প্রকৃতি ও প্রতিবেশ বিষয়ে দ্য ল্যানসেট প্লানেটরি হেলথ; পুনর্বাসন সেবা বিষয়ে দ্য ল্যানসেট ফিজিয়াট্রি; জনস্বাস্থ্য বিষয়ে দ্য ল্যানসেট পাবলিক হেলথ; শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা নিয়ে দ্য ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন; বাতজনিত রোগ নিয়ে দ্য ল্যানসেট রিউমাটোলজি। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলকে পৃথক গুরুত্ব দিয়ে আলাদা আলাদা সাময়িকী রয়েছে। যেমন দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ-আমেরিকাস, দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ-ইউরোপ, দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ-সাউথইস্ট এশিয়া এবং দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ-ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিক।
প্রতিটি সাময়িকীর জন্য পৃথকভাবে একজন করে এডিটর-ইন-চিফ রয়েছেন। এডিটর-ইন-চিফ, সম্পাদক, বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞসহ সম্পাদকীয় বিভাগে ১৭০ জনের বেশি পেশাদার কাজ করেন।
ল্যানসেট-এর প্রধান কার্যালয় লন্ডনে। এ ছাড়া পরিপূর্ণ কার্যালয় আছে চীনের বেইজিংয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এবং জার্মানির মিউনিখে। ল্যানসেট-এর হয়ে বিশেষ কর্মী দল আছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম, স্পেনের বার্সেলোনা ও মাদ্রিদ, যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো, চীনের হংকং, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এবং ভারতের চেন্নাইয়ে।
ল্যানসেট বলছে, সারা বিশ্বে তাদের গ্রাহকসংখ্যা ৩৫ লাখ। lancet.com–এ বছরে ৪ কোটি ২৫ লাখ মানুষ ভিজিট করে। বছরে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ গবেষণা বা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ডাউনলোড করা হয়। কিছু প্রবন্ধ বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যায়, কিছু প্রবন্ধে ১০ থেকে ৩৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত মূল্য দিতে হয়। প্রতিটি প্রবন্ধ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পর্যালোচনার পর প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বিজ্ঞান সাংবাদিকদের তথ্যর নির্ভরযোগ্য উৎস ল্যানসেট। কর্তৃপক্ষ হিসাব করে দেখেছে, বছরে গড়ে ৩ লাখ ৬৩ হাজার সংবাদ প্রতিবেদনে তাদের তথ্যের ব্যবহার হয়। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), বিবিসি, সিএনএন, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট নিয়মিতভাবে তথ্যের উৎস হিসেবে ল্যানসেটকে ব্যবহার করে।
প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
এ অঞ্চলে ডায়রিয়া-কলেরার সমস্যা অনেক পুরোনো। কলেরার রোগীদের পানিশূন্যতা দূর করার জন্য তরল পথ্যের ব্যবহার নিয়ে ল্যানসেট ১৯৫৩ সালে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের চিকিৎসক হেমেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায় এটি লিখেছিলেন।
কিন্তু ল্যানসেট-এ খাওয়ার স্যালাইনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীরা। তখন প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল কলেরা রিসার্চ কেন্দ্র (সিআরএল)। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ওই প্রবন্ধের লেখক ছিলেন ডেভিড নেলিন, রিচার্ড ক্যাশ, রফিকুল ইসলাম ও আবদুল মজিদ মোল্লা। এরপর ১৯৭৮ সালের ৫ আগস্টের সম্পাদকীয় কলামে বলা হয়েছিল, খাওয়ার স্যালাইন বা ওআরএস ছিল শতাব্দীর সেরা আবিষ্কার। এরপর খাওয়ার স্যালাইন নিয়ে আরও অনেক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ল্যানসেট-এ ছাপা হয়েছে। অন্য আরও অনেক বিষয়ে দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের লেখা ল্যানসেট-এ ছাপা হয়েছে। যদিও অনেকেই মনে করেন, সংখ্যায় তা কম।
সাম্প্রতিককালে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০১৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ল্যানসেট-এর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ। ‘বাংলাদেশ: ইনোভেশন ফর ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ (বাংলাদেশ: সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে উদ্ভাবন)’ বিষয়ে প্রকাশিত ওই সংখ্যায় ছয়টি গবেষণা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। ওই সংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল।
ল্যানসেট-এর এডিটর-ইন-চিফ রিচার্ড হর্টন তাঁর কলামে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যের অগ্রগতিকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম বড় রহস্য বলে মন্তব্য করেন। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর মন্তব্য কলামে লিখেছিলেন, জড়তা ও গণ্ডিবদ্ধতার মতো যমজ বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য পেয়েছে।
ল্যানসেট-এর ওই বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ আয়োজনে অন্যান্য জনস্বাস্থ্যবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির বিশেষ বৈশ্বিক স্বীকৃতি আসে ল্যানসেট-এর ওই বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের পর। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষকেরা ওই সংখ্যা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, এখনো দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে যখন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, তখন আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ইতিবাচক প্রচারণার জন্য বিভিন্ন দেশে গিয়েছিলেন। তাঁরা নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, দিল্লি, ইসলামাবাদসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি শহরে সভা করে ল্যানসেট-এর তথ্য উপস্থাপন করতেন। তাঁরা বলতেন, বাংলাদেশ পাল্টে গেছে, ল্যানসেট তার প্রমাণ।
ল্যানসেট এ পর্যন্ত তিনজন বাংলাদেশির প্রোফাইল বা সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান, আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী ও চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক সেঁজুতি সাহা।
ল্যানসেটে বাংলা
ল্যানসেট ইংরেজিতেই ছাপা হয়। কিছু কিছু প্রবন্ধ ফরাসি, চীনা ভাষাতেও ছাপা হতে দেখা যায়। তবে সেসব প্রবন্ধের ইংরেজি সংস্করণও থাকে। ল্যানসেট-এ বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে অন্তত একটি উদ্যোগের কথা জানা গেছে।
অণুজীব বিজ্ঞানী ও চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক সেঁজুতি সাহা ল্যানসেট-এ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বাংলা ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেঁজুতি সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কর্মীদের ওপর জরিপে দেখা যায়, তাঁদের ৫০ শতাংশ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পড়েন না, ভাষা ইংরেজি হওয়ার কারণে।
বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বাংলা ভাষায় প্রকাশ করার ব্যাপারে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেঁজুতি সাহা চিঠি লেখেন দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ-এ। ল্যানসেট-এর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। এরপর ২০২২ সালের জুনে সেঁজুতি সাহা ও অন্যদের লেখা টাইফয়েড বিষয়ে যে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল, প্রবন্ধের এক পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্তসার বাংলা ভাষায়ও প্রকাশ করেছিল ল্যানসেট।
নতুন প্রতিশ্রুতি
২০০ বছরের ইতিহাস বলছে, সাময়িকীটি অসংখ্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও চিকিৎসার নতুন নতুন পথ তৈরি করা ঘটনার একান্ত আশ্রয়স্থল হয়ে আছে। এখন ল্যানসেট গ্রুপের পক্ষ থেকে এই প্রচার শুরু হয়েছে যে সাময়িকীটির ২০০ বছর পূর্তির বছরে তাদের মনোযোগের ক্ষেত্রে থাকবে পাঁচটি বিষয়। এই তালিকায় আছে: শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন, মানসিক স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য গবেষণা এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
এসব বিষয়ে অতীতে বহু গবেষণা প্রবন্ধ ল্যানসেট-এ প্রকাশ করা হয়েছে। পাঁচটি বিষয়ই বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, পাঁচটি বিষয়ই বৈশ্বিকভাবে অবহেলিত বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে বেশিসংখ্যক গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ করবে ল্যানসেট।
একটি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা যায় তার ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর (একটি সাময়িকী নির্দিষ্ট সময়ে কত মানুষ পড়ছে, কতজন তা থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছে) দেখে। চিকিৎসা সাময়িকীগুলোর মধ্যে ল্যানসেট-এর ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর শীর্ষে।
আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরির ১৫টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ এ পর্যন্ত ল্যানসেট-এর বিভিন্ন সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে। এই বিজ্ঞানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ল্যানসেট বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও বহুল পঠিত জার্নাল। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের একটা স্বপ্ন থাকে ল্যানসেট-এ তাঁর লেখা ছাপা হোক। ল্যানসেট-এ প্রবন্ধ ছাপা হওয়া অত্যন্ত মর্যাদা ও স্বীকৃতির বিষয়।
ল্যানসেট-এ প্রবন্ধ ছাপার জন্য অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়, অনেক যত্ন করে কাজ করতে হয়। আমি আশা করি দেশের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ গবেষকদের প্রবন্ধ আরও বেশি করে ল্যানসেট-এর মতো জার্নালে ছাপা হোক, তাঁরা যেন সেইভাবে প্রস্তুতি নেন।’